ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

‘ব্লগার’ নাজিমুদ্দিনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা

blagar-nazim-06.04মুক্তমনা ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রীয় কর্মী নাজিমুদ্দিন সামাদকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সামাদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের মাস্টার্সের (এলএলএম) শিক্ষার্থী। তার বাড়ি সিলেটে। তিনি গেন্ডারিয়ায় একটি মেসে থাকতেন।

ফেসবুকে তিনি নিজেকে সিলেট জেলা বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করেন। তা ছাড়া সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ছিলেন বলে জানা গেছে।

বুধবার রাত ৯টার দিকে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানাধীন সোহরাওয়ার্দী কলেজের পূর্ব পাশে একরামপুর মোড়ে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে জখম করে এবং পরে গুলি করে। তাকে মিড ফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সামাদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে হেঁটে গেন্ডারিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন। একরামপুর মোড়ে আসতেই ৩-৪ জন যুবক ধারাল অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপায়। এতে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ অবস্থায় মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। হামলার সময় দুর্বৃত্তরা ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দেয়।

সূত্রাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) তপন কুমার সাহা বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোসা ও সামাদের মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরে নিহতের পরিচয় জানা গেছে।

সামাদের ফেসবুক আইডিতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি একজন মুক্তমনা ব্লগার। তিনি সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের একজন সক্রীয় কর্মি। তিনি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। এমনকি নিজ দল আওয়ামী লীগেরও সমালোচনা করেন তিনি। আওয়ামী ওলামা লীগের বিরোধী ছিলেন সামাদ। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও ওলামা লীগ পরস্পরবিরোধী বলে মনে করতেন তিনি। সামাদ তার ফেসবুক পেজে এসব বিষয়ে স্ট্যাটাস দেন।

সামাদের এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মন্তব্যে একজন লিখেছেন, ‘তোমার জন্য ভয় হয় নাজিম। একটু সাবধানে থেক। দেখতেই তো পাচ্ছ কী হচ্ছে। সাবধানে থেক।’

জবাবে নাজিমুদ্দিন লিখেছেন, ‘ভয় আমার নিজেরও হয় স্যার। অকালে মরে যাওয়ার ভয়। কিন্তু কী করব স্যার। মাথা নত করে চুপ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে এ মরণই বোধ হয় ভালো।’

তবে পুলিশ সামাদের নাম-ঠিকানা জানালেও তার চিন্তাচেতনা ও ব্লগ লেখার বিষয়ে কিছু জানায়নি। বুধবার রাতে সামাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশের ওয়ারি বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, ধারণা করছি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি আরো জানান, ময়না তদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে স্থানান্তর করা হবে।

নাজিমুদ্দিন সামাদের বন্ধুদের মাধ্যমে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নাজিমুদ্দিন হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

পাঠকের মতামত: